মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ, মাওয়া মুন্সিগঞ্জ ।
গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে, বন-জঙ্গল হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বদলে যাচ্ছে ছায়াঘেরা দেশের সবুজ প্রাকৃতি। প্রতিনিয়ত বসতির প্রয়োজনে কেটে ফেলা হচ্ছে ঝোপঝাড় ফসলি জমি। পরিবেশ বিপর্যয়ের এই ধারাবাহিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে মুন্সীঞ্জের বুনো শাক-সবজি। আর এর প্রভাব পড়ছে শুধু ৬টি উপজেলার ১৫ ভাগ মানুষের জীবিকায়।
বিক্রমপুর আলু উৎপাদনের নাম রয়েছে বিশ্বজুরে বহু, মোগল আমল থেকে। পাশাপাশি এজেলার খোবই কাছে ঢাকার শহর হওয়ায় এ অঞ্চলের বুনো শাক সবজি পাইকারী নিতে এখানে আসেন ঢাকা সহ দুর দুরান্তের মানুষ। এঅঞ্চলের তরতাজা শাক সবজির সুনাম রয়েছে বেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই জেলায় শাক সবজির জীবিকা নির্বাহকারীদের অনেকেই ফিরছেন অন্য পেশায়। কেউ কেউ টিকে আছে অতিকষ্টে। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী আলো বেগম প্রায় ৩০ বছর আগে থেকে বুনো শাক -সবজি কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। স্বামী বাবুল হোসেন বিয়ের এক বছর পর থেকেই প্যারালাইসিস রোগী হয়ে যাওয়ায় তাকে,এই পথে নামতে হয় তখন থেকেই। শাক কুড়িয়ে ঘরে ঘরে বিক্রি করে চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফিরতেন। খুরিয়ে খুরিয়ে কোন রকম কেটে আসছিল তার অভাবের সংসার জীবনের দিন। কিন্তু সেদিন ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে তার কেটেগেছে ৪৫ বছর দেখেন নি আলো নাম হলেও আলোর জীবন সে। তবুও জীবন যুদ্ধের হাল না ছেড়ে মাওয়া বাজার সুপার মার্কেটের সামনে ফুতপাতে কহেক বছর ধরে বিক্রি করে আসছিলেন সেই ”আলো বেগম” আলাপকালে সেই হতাশাই প্রকাশ করলেন।
বলেন ছেলে মেয়ে নাই”স্বমী অচল,কামাই নাই কেমনে চলুম, ৪৫ বছর বয়সে এসে ও জীবনের অন্ধকার কাটলোনা আমার এমনওই দুইখ্যা কপাল। তবে আলো বেগম। এক নিঃশ্বাসে অনেক শাকের নাম বলে ফেললেন মামাকলা (জংলি পটল) গাছের পাতা, ঢেঁকি শাক, থানকুনি পাতা, কচুর লতি, কুমারী লতা, তিত বেগুন, কলমি শাক, হেলেঞ্চা শাক, ভাউত্তা শাক, চটা শাক, আগ্রা শাক, মুরমুইররা শাক, গোল হেলেঞ্চা শাক, অউদ্দা শাকসহ আরও কত শাকের নাম। আবার এসব শাকের গুণাগুণ সম্পর্কেও আলো বেগম সচেতন। বললেন, কুমারী লতার আগা সাপে খায়। মানুষে এই লতার আগা খেলে সাপের বিষ নেমে যায়। পাশাপাশি এ অঞ্চলের বুনো সবজি ও বিক্রি করেন এখানে আট বছর ধরে সেগুলোর ও নাম বল্লেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ এসব বুনো শাক সবজি পাওয়া যেত। আমার মতো এই কাজে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন হাতে গনা ২/৪জন এ পেশাায় নিয়োজিত আছে।এখন করুন অবস্থায় কাটছে তার দিন।
৪৫ বছর বয়সে ও আলোর জীবনের অন্ধকার কাটেনি। খোজঁনিয়ে জানাগেছে এক সময় বিক্রমপুরে আদিবাসী রাখাইন স¤প্রদায়ের লোকজনের কাছে বুনো শাক সবজির কদর অনেক বেশি ছিল, ছিল ব্যাপক চাহিদা। কোনো জংলি শাক সবজি বাঙালি সমাজে ততটা গুরুত্ব ছিলনা। কিন্তু এখন বিক্রমপুরে রাখাইন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে গেছে। শাক সবজি কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহকারী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। একই সাথে ফুরিয়ে গেছে শাক সবজির উৎসস্থলও। এককালে এলাকায় সম্পদশালী ব্যক্তি বর্তমান লৌহজং উপজেলা চেয়ারম্যান ওসমান গনি তালুকদার ও সাবেক মেদিনী মন্ডল ইউঃ চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, বহু আগে এলাকায় বন-জঙ্গল থেকে গ্রামের কৃষক বা এক শ্রেণীর লোকজন শাক সবজি কুড়িয়ে আনতেন তাদের বাড়িতে। তারা কুড়িয়ে আনা শাক সবজির বদলে, তাদের বাড়ির গাছের কয়েকটি নারিকেল দিয়ে দিতেন। তখন অনেক শাক সবজি পাওয়া যেত। এখন সে সময়ের শাক সবজি দেখা যায় না। কালেরর বিবর্তনে আজ হারাতে বসেছে গ্রামবাংলা শাক সবজি।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।