মো.রুবেল ইসলাম তাহমিদ ,স্টাভ রিপোর্টার সময় বাংলার(মুন্সীগঞ্জ)
যেকোনো পাশ থেকে দেখলে স্থাপনাটিকে পিরামিড মনে হবে। মিসর বা মেক্সিকোর পিরামিডের মতো ভাঁজে ভাঁজে খাঁজ কাটা নয়। এর দেয়ালগুলো ইটের তৈরি, মসৃণ ও সমান। উচ্চতাও অত বিশাল নয়, দুই স্তরের স্থাপনাটি দোতলা একটি ভবনের সমান হবে।
মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামে আট থেকে বারো শতকের কোনো এক সময়ে এটি বৌদ্ধদের স্মৃতিস্তম্ভ বা স্তুপ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। নকশার দিক থেকে একদম নতুন এই স্তুপসহ দেশের ইতিহাসে যোগ হওয়ার মতো বেশ কিছু স্থাপনা আবিষ্কৃত হয়েছে। এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক। ২০১৩ সালে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের সূচনা করা হয়। শুধু স্থাপত্য নকশা ও বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন হিসেবেই নয়, বিশ্বের বৌদ্ধ সভ্যতার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন বলে মনে করছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের দলটি। চন্দ্র, বর্ম ও সেন শাসকদের আমলে রাজধানী হিসেবে পরিচিত বিক্রমপুর এলাকার বজ্রযোগিনী গ্রাম ছিল বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রচারক অতীশ দীপংকরের জন্মস্থান। কিন্তু তিনি কোথায় বসে সাধনা করতেন, কোথায় ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন, তা ছিল অজানা। সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের দলটি অনুমান করছে, নাটেশ্বর গ্রামের এই স্থাপনা ছিল অতীশ দীপংকরের সেই সাধনার স্থান কিংবা ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র। ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়েছে। সেসময় উপস্থিত ছিলেন চীনের দুবার রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক চাই হুয়ান বোর নেতৃত্বে ১৮ জন চীনা প্রত্নতাত্ত্বিকের একটি দল। তাদের মতে, এটি পৃথিবীর অন্যতম স্তূপ। অগ্রসর বিক্রমপুর ও ঐতিহ্য অন্বেষার নেতৃত্বে পরিচালিত ওই গবেষণায় চীনের দলটিও কাজ করছে। তাদের দেশে অতীশ দীপংকরকে গৌতম বুদ্ধের পরেই সবচেয়ে সম্মানিত বৌদ্ধধর্মের প্রচারক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠার ইতিহাস খুঁজতে তারা এই গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গী হয়েছে। এখানে নতুন করে আবিস্কার হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ পিরামিড আকৃতির স্থাপনা। এই স্থাপত্যের পূর্ববাহু প্রকাশ হয়েছে ৪৪ মিটার দীর্ঘ জায়গা নিয়ে। আর উত্তর ও দক্ষিণের বাহুগুলো উন্মচিত হলেও বাকি রয়েছে পশ্চিমাংশের কাজ। অষ্টোকোনাকৃতির বৌদ্ধ বিহারে তিনটি স্তুপের মধ্যে প্রথমটির আয়তন ২২৮ বর্গমিটার, দ্বিতীয় স্তুপের আয়তন ১৮০ মিটার জায়গা নিয়ে আর তৃতীয়টির পুরো আয়তন নির্ধারিত হয়নি কাজের অসম্পন্নতার কারণে। নাটেশ্বরের এই বিহারে রয়েছে চারটি হল ঘর আর এর বহিরাংশে ৫১ মিটার দীর্ঘ ও দুই মিটার প্রশস্তের ইট দিয়ে নির্মিত একটি রাস্তা। খনন কাজ এখনো শেষ না হলেও এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি দেখতে প্রতিদিনই উৎসুকদের ভিড় বাড়ছে।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।