আরও কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে রোববার সকালে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে আনার কথা রয়েছে। সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশন শেষ করে প্রতিবারের মতো বাসে করে তাদের চট্রগ্রামের পতেঙ্গা নৌ-ঘাঁটির অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে নৌ-বাহিনীর বিশেষ জাহাজে সমুদ্র পথে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে রোহিঙ্গাদের।
নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে ভাসানচরে যাওয়াদের জীবনচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে এখন অনেকে আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রথম যাত্রার আগে অনেক বুঝিয়েও জড়ো করা কষ্টকর ছিল। এখন চিত্র পাল্টেছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে নিজেরাই এখন তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ভাসানচরে ৪ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি যাদের আত্মীয়স্বজন গেছে, তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনেই অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছুক।
তারা আরও জানায়, প্রথমবার জোর করে গোপনে বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে লুকিয়ে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়েছিল, এখন সেরকম নয়। আগেরদিন বিকেলে অনেকেই প্রথম ট্রিপের যাত্রী হতে ক্যাম্পে এসে পড়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুর-দ্দৌজা নয়ন বলেন, এখন পর্যন্ত সেচ্ছায় ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেয়া হয়েছে। চতুর্থ দফায় যাবেন সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা।
ভাসানচর যেতে নিবন্ধন করতে আসা টেকনাফ চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আই-ব্লকের বাসিন্দা ফয়েজুল হক বলেন, ক্যাম্পের ঘিঞ্জি বস্তির চেয়ে ভাসানচরের জীবন মান অনেক ভালো। তাই ভাসানচর চলে যাচ্ছি।
কথা হয় উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে ক্যাম্পে বসবাস করতে খুবই কষ্ট হয়। তা ছাড়া ছোট্ট ঝুঁপড়ি ঘরে বউ বাচ্চা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। একটু উন্নত পরিবেশের জীবনযাপনের জন্য ভাসানচরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নিজ দেশের সেনাবাহিনীর হাতে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে আসছেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। তবে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ঢল আসা শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট।
ওই সময় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপের মুখে পড়েও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না মিয়ানমার। উল্টো রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে মেঘনা নদীর নোয়াখালী অংশে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
এ জন্য নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রাম করা হয়েছে।