শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, দুর্ভোগ চরমে

মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ, শিমুলিয়া থেকেঃ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে গত বুধবার সকাল থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক যানবাহন।

ফলে পদ্মা নদী পারাপারের অপেক্ষায় থাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা ঘাটে এসে বৃষ্টিতে ভিজে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। ঘাট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বিতীয় দিনের মত বৃহস্পতিবারও পদ্মা নদীতে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। নদীতে প্রবল বাতাসের কারণে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া তীব্র স্রোতও বয়ে যাচ্ছে। গত বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত শিমুলিয়া- বাংলাবাজার নৌপথে ফেরিচলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রবল বাতাসের কারণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে শিমুলিয়া ঘাটের পন্টুনগুলোতে। বুধবার ঢেউয়ের কারণে সকাল আটটার দিকে ২ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই ভাগ হয়ে যায়। ভেঙে যাওয়া পন্টুনটি বেঁধে রাখা হয়েছে। সেদিন সকাল থেকে পদ্মায় ঢেউয়ের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও ঘাটে প্রচুর যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে। বৃষ্টিতে ভিজে,খেয়ে না খেয়ে পদ্মা পারি দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন তরা।এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি রংপুর নেত্রকোনা থেকে গত বুধবার সকালে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছে। তারা মামা বুধবার মারা গেছেন।শেষ বারের মত দেখতে যাবেন বরিশালের উজিরপুর যাবেন। জাহাঙ্গীর বলেন, বুধবার সকালে ঘাটে আসার পর জানতে পারলাম ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। মামাকে শেষ দেখা দেখার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করছিলাম। দুদিন চলে যাচ্ছে, ফেরি চলাচল না করায় ঘাটে এখন অপেক্ষা করছি। সুজন অপু নামে আরেকজন জানান, সাভারের আশুলিয়া থেকে বুধবার সকালে ঘাটে স্ত্রী,সন্তান নিয়ে বুধবার সকালে ঘাটে এসেছেন। যাবেন খুলনায় বাগেরহাটে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ী যায়নি। ঘাটে অনেক চাপ ছিল বলে। বুধবার ঘাটে আসলাম, দেখি ফেরি বন্ধ। স্ত্রী- সন্তান নিয়ে দুই দিন ধরে ঘাটে আছি। কি যে ভোগান্তি বলে বোঝানো যাবে না। সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তার সস্ত্রী ও ১৩ বছরের ছেলে কয়েক দিন আগে শরিয়তপুর শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেখানে পানিতে ডুবে আজকে বুধবার মারা যায়। ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে যাবেন। জানাজা বৃহস্পতিবার দুপুরে হওয়ার কথা ছিল। তবে ঘাটে এসে তিনি অপেক্ষায় আছেন। একঘন্টা, দুঘন্টা এমন করে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে। নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় সে নিজের ছেলেকে দেখতে যেতে পারছেন না। ঘাটে এসে এমন দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক। শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. জাকির হোসেন বিকেল পৌনে ৬ টার দিকে জানান , গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজকে ফেরি ছাড়ার কোন সম্ভবনা নেই। এর ফলে ঘাটে এসে অসংখ্য ছোট-বড় যানবাহন জড়ো হয়েছে। ঘাটে প্রায় সাড়ে পাঁচশ যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে। এসব যানবাহনের মধ্যে মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া ছোট গাড়ি ও বাস রয়েছে। তবে নতুন করে ঘাড়ি আসছেনা।কেউ কেউ আসলে আবার ফিরে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে পদ্মা নদীতে প্রবল ঘুর্ণি স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ২ নম্বর ঘাটের পন্টুন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ নৌপথে দুই নম্বর বিপদ সংকেত রয়েছে।এ অবস্থায় এই নৌপথ ব্যবহারকারীদের মাইকিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নদীতে প্রচণ্ড বাতাস, ঢেউ ও স্রোত রয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে।