মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ,মাওয়া মুন্সীগঞ্জ ।
মাওয়া-ভাঙ্গার পরিবর্তে এখন রেলের লক্ষ্য ঢাকা-ভাঙ্গা রেললাইন চালু করা ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল চালু হতে পারে তবে ট্রেন ছাড়াই চালু হবে পদ্মা সেতু! সেতুর সড়কপথের সঙ্গেই চলছে রেলপথ নির্মাণের কাজ এখন। সেতুর অবকাঠামোগত নির্মাণ প্রায় শেষের পথে বর্তমানে পুরো সেতুর সার্বিক নির্মাণ অগ্রগতি ৯৪.২৫ শতাংশের বেশি। আগামী বছরের জুনে সড়ক ও রেলপথ নিয়ে দ্বিতল পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই চলছে দিন রাত শেষ মুহূর্তের কাজ। সেতুর দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের সব কয়টি স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ২ মাস । চলতি অক্টোবরের শেষের দিকে সেতুর উপর কার্পেটিংয়ের কাজ এক টানা শুরুহবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২২ সালের জুনের শুরুতেই যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে সেতুর সড়কপথ টি। কিন্তু পদ্মাসেতুর রেলপথে ট্রেন চলতে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।আজ বুধবার ২০ অক্টোবরর এই মুহূর্তে সেতুর রেল অংশে চলছে গ্যাসলাইন বসানোর কাজ পুরোদমে। তবে পুরো সেতুটিই এখনো সেতু কর্তৃপক্ষের হাতেই রয়েছে । রেলের অংশ রেলপথ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করার আগ পর্যন্ত সেতুতে এর আগে থেকেই রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। এখনো কিন্তু সেতুর রেলের যে অংশ ,বা চলমান যে কাজ তা শেষ হবে আগামী বছরের জুনে।মানে দারালো আগামী মার্চের আগে সেতুতে রেললাইন বসানোর অনুমতি দেবে না সেতু কর্তৃপক্ষ। এমন টা জানাগেছে সেতুর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে।সেতুতে রেললাইন বসাতে সময় লাগবে অন্তত ছয় মাস। তাই আগামী জুনের আগে সেতুতে রেলপথ তৈরির কাজ প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে সেতুটি রেলের জন্য অপেক্ষা করবেনা কারণ উদ্বোধন তো করা লাগবে । এ জন্যই ট্রেন ছাড়াই চালু হবে পদ্মা সেতু! যদি আগামী জুনের মধ্যে রেলপথ প্রস্তুত না হয়, তাহলে ট্রেন ছাড়াই চালু করা হবে পদ্মা সেতু। এই অবস্থা বিবেচনায় নতুন করে পরিকল্পনা করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।তা হলো পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। আর এর কেন্দ্রে থাকবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা। এই ভাঙ্গাতেই তৈরি হবে রেলওয়ে জংশন। এই পুরো পথকে তিন ভাগে ভাগ করে কাজ শুরু করা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই । যেমন ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর। গেল সময় গুলোতে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল করার জন্য প্রাথমিকভাবে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পদ্মা সেতুর সড়কের সঙ্গে ট্রেনের এই অংশটুকুই চালু হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে সেখান থেকে সরে এসে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।সে ক্ষেত্রে নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ট্রেন চালু হবে । যদিও ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের কাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা।
সমপ্রতি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বর্তমান কাজের গতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। গেল মাসে,মাওয়া প্রান্তে পরিদর্শনে এসে। তিনি আরো বলেছেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করার ভাবনা এখনো তাঁর আছে। সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হলে জানাগলো, যদি এই বছর ডিসেম্বর বা আগামী বছর জানুয়ারিতেও সেতুর রেলের অংশ বুঝে পান রেলপথমন্ত্রী, তাহলে জুনের আগে কাজ শেষ করতে পারবে।
সময়মতো রেলপথ বুঝে পাওয়া না গেলে বিকল্প পরিকল্পনা কী —সে ক্ষেত্রে মন্ত্রী বলেছেন , (২০২২ সালের) জুনে না হলে ডিসেম্বরে বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা আছে। তখন ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চালানো হবে ট্রেন’গত ২৯ আগস্ট মেট্রো ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল উদ্বোধনের দিন উত্তরার দিয়াবাড়ীতে পদ্মা সেতুর রেল অংশের এই জটিলতা নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে সেতুতে রেলের কাজ শেষ না হলে আমরা অপেক্ষা করব না।’ যদিও একই দিনে ট্রেন চালুর বিষয়ে এখনো আশাবাদী । এদিকে সড়কের সঙ্গে একই দিন রেলপথ চালু হোক এটাই চেয়েছেন রেলপথমন্ত্রী । তা ছাড়া সড়কপথ আগে চালু হলে সেতুর রেলপথে কমপন তৈরি হবে।এতে রেল অংশে কংক্রিটের ঢালাই ও রেললাইন বসাতে অসুবিধা তৈরি হতে পারে।
তিনি এখনো জুনেই রেলপথের কাজ শেষ করতে চান তবে । জুনে চালু না হলে ডিসেম্বরে ট্রেন চালু হবে।’
পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলছে এটা দেখার জন্যই মাওয়ার এই অংশকে শুরু থেকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এখন যদি সেটাও না হয় তাহলে চোখে দেখে সুখ পাওয়ার লাভটাও থাকছে না রেলপথমন্ত্রী বলেন ।পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সেতুর জাজিরা ও মাওয়া প্রান্ত থেকে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগেই থেকে। এরই মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ১.৭ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।জাজিরার উড়াল পথে (ভায়াডাক্ট) চলছে রেললাইন বসানোর কাজ। পদ্মা সেতু ও সেতুর সঙ্গে যুক্ত উড়াল পথের রেললাইনে কোনো পাথর থাকবে না। এই পথে রেললাইনের স্লিপার ও রেলপাত বসিয়ে আবার কংক্রিটের ঢালাই করা হবে। পরে ‘গ্যাং ট্রেন’ দিয়ে লাইনকে চূড়ান্ত রেলপথে রূপ দেওয়া হবে। প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা এক প্রকৌশলী বলেন, ‘দুই মাসের মধ্যে চার কিলোমিটার রেললাইন বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে এই মুহূর্তে কাজ চলছে’ জুরে সুরে।রাজধানীর কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, পদ্মা সেতু, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত এই রেলপথে ২০টি স্টেশন থাকবে। সর্বশেষ এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশের বেশি । আর ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি ৪০.৫০ শতাংশের বেশি । ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজের গড় অগ্রগতি ৫৪.৭৫ শতাংশের বেশি। আর ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো কাজের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৪৩.৫০ শতাংশের বেশি ।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।