মাওয়া মুন্সিগঞ্জ থেকে -মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ।
পদ্মাসেতু শেষ সময়ের কাজ চলছে জুনের মধ্যে খুলে দেওয়ার প্রত্যাশায় পদ্মাসেতু দ্বিতলবিশিষ্ট এর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন, নিচ দিয়ে চলাচল করবে রেল। দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে সেতুটি চালু হলে।এখন সেতুটি চালুর অপেক্ষায় দক্ষিণের মানুষ। গত বছরের ২৩ আগস্ট পদ্মা সেতুতে শেষ রোড স্ল্যাবটি বসানো হয়।এরপর সংযুক্ত হয়েছে সেতুর মাওয়া-জাজিরা সড়কপথে। চলতি বছরে জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে চলছে শেষ সময়ের কাজ। গেল ৩০ শে জানুয়ারী মাসের অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৬ দশমিক ১০ শতাংশ, আর পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৯ দশমিক ৫০ শতাংশের বেশি। আর সেতুর গ্যাস লাইনের কাজ চলতি বছরের ফেব্রয়ারী মাসেই শেষ হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বোন কে নিয়ে পদ্মা সেতু পরিদর্শন করেছেন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রধানমন্ত্রী গাড়ি নিয়ে সেতুতে ওঠেন। সেতুর সাত নম্বর পিলার থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে পদ্মাসেতু দেখেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। ওই সময় সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা। সেদিন শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) এ খবরে উচ্ছ্বসিত মুন্সীগঞ্জের মাওয়া সহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে,মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ দশমিক ১০ শতাংশ। স্বপ্নের সেতুতে গাড়ি নিয়ে উঠতে আর ৪ শতাংশের অপেক্ষা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে ২ হাজার ৯১৭টি রোড ওয়ে স্ল্যাব এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। অনেক আগে তার পরই সেতুর কাজে তুমুল বেস্ততা কাজের এখন,জুনের মধ্যে খুলে দেওয়ার প্রত্যাশায়।বর্তমানে সেতুতে ,ভায়াডাক্টে কার্পেটিং, ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন (পানিনিরোধক), মূল সেতুর মুভমেন্ট জয়েন্ট, ভায়াডাক্টের মুভমেন্ট জয়েন্ট,ল্যাম্পপোস্ট, অ্যালুমিনিয়াম রেলিং, গ্যাসের পাইপলাইন, মূল সেতুর কার্পেটিং, ৪০০ কেভিএ বিদ্যুৎ ও রেললাইনের কাজ চলমান রয়েছে ।সেতু নির্মাণের মোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৩১ কোটি টাকা। সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। এরপরও প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর থাকবে। তবে সে সময়টা সেতুর কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত ও ঠিকাদারের পাওনা মেটানোর জন্য নির্ধারিত।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, আগামী জুনে সেতু চালু হবে, এমন একটি প্রত্যাশা দক্ষিণের মানুষের, সেতু ঘিরে সড়কপথ ও নানা ধরনের প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে, যাতে সেতু চালু হলে এর সুফল সহজে মানুষ পায়।পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আবদুল কাদের বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেতু উদ্বোধন করা হবে। এখন পিচ ঢালাই, কিছু জায়গায় প্যারাপেট ওয়াল এবং সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। ‘আমাদের সামনে লক্ষ্য হচ্ছে, জুনের মধ্যে সেতু খুলে দেওয়া। ওই লক্ষ্য নিয়ে শেষ সময়ের কাজ চলছে। দেশবাসী আগ্রহ নিয়ে বসে আছে সেতু দিয়ে পারাপার হওয়ার জন্য। আমরা আশাবাদী, জুনেই সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে।’সেতুর নিচ তলা দিয়ে বর্তমানে তুমুল ব্যস্ততা রয়েছে গ্যাস পাইপ বসানোর কাজ,যে পথে চলবে ট্রেন যার পাশ দিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস পাইপ । সেতুর মাধ্যমে দুই পারের গ্যাস পাইপ লাইনের কাজের অগ্রগতি ৭২শতাংশের বেশি।প্রথম থেকে প্রমত্তা পদ্মাসেতুর উপর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) দ্রুতগতিতে সেতুর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।গেল সময়গুলোতে মহামারী করোনা বিস্তার এবং নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এখন শুধু স্বপ্নধরার হাতছানি। এবছরের উদ্বোধন কে কেন্দ্র করে বিশেষ উদ্যমে চলছে সেতুর শেষ পর্যায়ের কাজ।