আব্দুল্লাহ, স্টাফ রিপোর্টার (সিলেট)

লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে সিলেটের প্রবীণ, বিশিষ্ট ইসলামী আলোচক, গবেষক এবং চিন্তক ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম,সিলেটের স্বনামধন্য মাদ্রাসা দারুল উলুম হরিপুর বাজার মাদ্রাসা’র শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি,বালিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ’র ইমাম ও খতিব হযরত মাওলানা শায়েখ মুফতি ইউসুফ (শ্যামপুরী) এর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার(০৩ জুন) রাত ০৯ ঘটিকায় সময় হরিপুর বাজার মাদ্রাসা মাঠে জানাজার নামাজ শেষে হরিপুর মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে’র পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। মাওলানা মুফতি ইউসুফ (শ্যামপুরী) এর জানাজার নামাজে লাখো মানুষের ঢল নামে। নামাজে মাদ্রাসা মাঠে জায়গা না হওয়ায় হরিপুর বাজারের আশপাশের রাস্তাগুলো ও সিলেট তামাবিল হাইওয়ে রোড বন্ধ করে জানাজার নামাজ আদায় করেন লাখো মানুষ। জানাজায় সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মুসল্লি অংশ নেন।

এতে ইমামতি করেন মুফতি ইউসুফ’র ছোট ছেলে হাফিজ মাওলানা সাদিক আহমেদ । মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরী’র জানাজায় অংশ নিতে শুক্রবার বাদ জুম্মা থেকেই মুসল্লিরা মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে আসতে থাকেন। মুসল্লিদের আগমনে মাদ্রাসা মাঠে লাশ নিয়ে যাওয়ার আগেই সেখানটা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মরহুমের লাশ বিকাল ০৩ ঘটিকায় নিজ বাড়ি থেকে দীর্ঘ ৪৮ বছরের কর্মস্থল বালিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে নিয়ে যাওয়া হয় তারপর বিকাল ০৪ ঘটিকায় মাদ্রাসা মাঠে নিয়ে আসেন। লাশ মাদ্রাসা মাঠে নিয়ে আসার পর তার হাজারো ছাত্র, শিষ্য, ভক্ত-অনুরক্ত, রাজনীতিবিদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়ান। এ সময় হরিপুর মাদ্রাসা মাঠে এক শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করে। মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরী’র জানাজার পূর্বে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষক, আলেম, রাজনীতিক ও মরহুমের স্বজনসহ অনেকেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। মরহুমের জীবনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আযাদ দ্বীনি এদারা ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন, দরগাহপুর মাদ্রাসা’র মুহতামিম আল্লাামা নুরুল ইসলাম খান (সুনামগঞ্জী), মাওলানা মোহাম্মদ বীন ইদ্রিস (লক্ষীপুরী),কানাইঘাট মাদ্রাসা’র শায়খুল হাদিস মাওলানা আলিম উদ্দিন (দুর্লভপুরী), কাজিরবাজার মাদ্রাসা’র শায়খুল হাদিস মাওলানা আহমদ আলী (চিল্লা), হরিপুর বাজার মাদ্রাসা’র মুহতামিম শায়খ হিলাল আহমদ(হরিপুরী),মাওলানা মুখলিছুর রহমান (রাজাগঞ্জী), ধনুকান্দি মাদ্রাসা’র মুহতামিম মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান,মরহুমের বড় ছেলে শিকারখাঁ জামে মসজিদ’র ইমাম ও খতিব মাওলানা হারুনুর রশিদ প্রমুখ। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন’র মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মাওলানা এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, সিলেট সিটি কর্পোরেশন’র আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান (এল.এল বি), মাওলানা রেজাউল করিম আবরার (ঢাকা), জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ’র সভাপতি কামাল আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী, উপজেলা যুবলীগ’র আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল বশিরুল ইসলাম, জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক, ইউ/পি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিক আহমেদ, আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম, বাহারুল আলম বাহার, সামছুজ্জামান চৌধুরী, হরিপুর বাজার মাদ্রাসা’র শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল কাদির (বাগেরখালী), মুফতি আব্দুস সালাম (জৈন্তাপুরী), দারুল উলুম হেমু মাদ্রাসা’র মুহতামিম মুফতি জিল্লুর রহমান (কাসেমী), সিলেট জেলা পরিষদ’র সাবেক সদস্য মুহিবুল হক মুহিব, সাবেক ইউ/পি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রশিদ, সাবেক ইউ/পি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন, উপজেলা পরিষদ’র ভাইস চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন এম. এ, ইউ/পি সদস্য আব্দুর রকিব, রফিক আহমেদ, আব্দুল মতিন, সৈকত আলীসহ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জমিয়ত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিশিষ্টজনেরা বলেন, মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরী ছিলেন একজন সংগ্রামী আলেমে দ্বীন ও বহু গুণে গুনান্বিত ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে সিলেটবাসী ও বৃহত্তর জৈন্তাবাসী একজন খালিস ইলমে হাদীসের উজ্জল নক্ষত্রকে হারালো, যা সহজে পূরণ হবার নয়। তিনি বাতিলের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। সিলেটবাসী ও বৃহত্তর জৈন্তাবাসী তাকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে। বক্তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০ ঘটিকায় তিনি নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে মুফতি ইউসুফ’র বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে ও ছাত্র-শিক্ষক-মুরিদানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।