মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণনে থেমে নেই পদ্মাসেতুর কাজ ।
সময় বাংলার ||
শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০২০, ১১.১১ পিএম
মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ মাওয়া থেকে ঃ
মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণনে দেশের সর্ব প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পাষাপাশি বন্ধরয়েছে দোকান পাট-হোটেল রেস্তুরা -ব্যবসা বাণিজ্য, ভাইরাসের এ প্রকোপ ঠেকাতে সরকারের দেয়া ১০ দিনের ছুটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষ। তবে থেমে নেই দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো সরকারের চেলেঞ্জের পদ্মাসেতুর কাজ ।
বাংলাদেশ সেনা বাহিনির কঠোর নিরাপত্তায় চলছে । সেতুর কাজ ।বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে সেনা বাহিনির ২৪ ঘন্টা চলছে মহড়া । প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ।শ্রমিকদের নিরাপত্তার জণ্য শ্রমিক প্রধান দের সাথে .দফায় দফায় পরামর্শ ।পদ্মা সেতু নির্মাণ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মূলত বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জানান তারা পদ্মার দুই পাড়েই সেনাবাহিনীর দুটি ক্যাম্প থাকায় ও । একাধিক মহড়া চৌকিও রয়েছে এখান কার সেনাবাহিনীর।তা ছাড়াও অনেক বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। এ কারণেই বাড়তি এই সতর্কতা। জাতে করে সেতুর কাজের কোন প্রকার প্রভাব না ফেলে ।এদিকে সারা বিশ্বে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ তছনছ করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশ জুড়ে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে কঠিন সময়ের মুখোমুখি রয়েছেন এই এলাকার হতদরিদ্র ও দিনমজুরা।অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ায় করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি জীবিকা নিয়ে বড়ো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ।দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমজীবী যেমন-মুটে, মজুর, রিকশাওয়ালা, অটোরিকশা-টেম্পো চালক-হেলপার, সবজি-ফল ও চা-পান বিক্রেতা এবং কুলিসহ নিম্ন আয়ের হাজার-হাজার মানুষ চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।অন্যথায় করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি লাখ-লাখ মানুষের খেয়ে বেঁচে থাকাই বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে । পদ্মাপাড়ে।অবশ্য প্রান্তিক গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের অন্তত ছয় ধরনের সহায়তা কর্মসূচি আগে থেকেই চালু রয়েছে।কর্মহারা গৃহকর্মী ও দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে নানা ধরনের কাজ করে যারা বস্তিতে বসবাস করেন তারাও পরিবারের অন্নের যোগান নিয়ে দিশেহারা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছেন।বিচ্ছিন্ন এই সময়কালে প্রতিদিনের খাদ্য, ওষুধ ও পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী কেনার অর্থের উত্স হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন সমাজের এই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ গুলো। এর আগে মাননিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী সহ দেশের কয়েকটি স্থানে দিনমজুরদের মধ্যে চাল, ডাল, আলু, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য বিতরণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ের এসব উদ্যোগ সামগ্রিক পরিস্থিতিতে চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।যেমন ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারিভাবে হতদরিদ্র ও দিনমজুরদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।অন্যথায় করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি লাখ-লাখ মানুষের খেয়ে বেঁচে থাকাই বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।অবশ্য প্রান্তিক গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের অন্তত ছয় ধরনের সহায়তা কর্মসূচি আগে থেকেই চালু রয়েছে।রাজধানীর সর্বত্রই ওষুধ, কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া অন্য সকল দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে সরকারের।দেশের সর্ববৃহত্ সবজিসহ নিত্যপণ্যের আড়ত কাওরানবাজারের বেশিরভাগ দোকান গতকাল বন্ধ থাকতে দেখা যায়।যে কয়টি দোকান খোলা, সেখানেও তেমন পণ্য নেই। পণ্য থাকলেও ক্রেতা খুবই কম, বলতে গেলে একেবারে হাতেগোনা।কওরানবাজারে প্রতিদিন ডাব বিক্রি করে সংসার চালান কুমিল্লার মোস্তাক।তার থেকে জানাগেল, পেটের দায়ে করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ফুটপাতে কিছু ডাব নিয়ে বসেছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই। পরিবারের চার সদস্যের প্রতিদিনের খাবার কীভাবে যোগান দেবেন তা নিয়েই মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন মোস্তাক।মালিবাগ-মৌচাক এলাকায় ঘুরে ঘুরে জুতা সেলাই ও পলিশের কাজ করেন ফরিদপুরের দিলীপ কর্মকার। বলেনমানুষ ঘরে ঢুকে যাওয়ায় এবং দোকানপাট বন্ধ থাকায় গত তিন দিন ধরে তার কোনো উপার্জন নেই। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কারও বাড়িতে ঢুকতে মানা।মাসের শেষদিকে এসে এই ধরনের পরিস্থিতির কথা সে ভাবতেও পারেনি।খাবার, ওষুধ ও ঘরভাড়ার টাকা কোথায় পাবেন— এর কোনো উত্তর নেই নিম্নআয়ের এই দিলীপের।ঢাকার রাস্তাগুলোতে ও বাসস্ট্যান্ডে এখন গেলে মনে হয় অচেনা কোনো শহর। চিরচেনা সেই যানজট, ফুটপাতে কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা একদম নেই। সিএনজি স্টেশন ও পেট্রোল পাম্পগুলোও ফাঁকা।একদম ফাঁকা রাস্তায় কিছুক্ষণ পরপর দুই-একটি প্রাইভেট কার দ্রুতগতিতে সাঁ সাঁ করে চলছে।মূল সড়কসহ অলি-গলিগুলোতে যাত্রীর প্রতিক্ষায় রিকশাচালকরা। দূর থেকে কাউকে আসতে দেখলে ছুটে যাচ্ছেন একাধিক রিকশাচালক।নেই দর কষাকষি। ‘স্যার আপনি দিয়েন’—একথা বলেই যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় রাস্তায় নামা রিকশাচালকরা।রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা রংপুরের সুমন জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দুই দিন বের হননি। কিন্তু ঘরে খাবার ফুরিয়ে যাওয়া সব ধরনের ঝুঁকি ও ভীতি উপেক্ষা করে মুখে মাস্ক পরে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, তবে যাত্রী মিলছে না।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েক হাজার হতদরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করবেন আগামী রবিবার থেকে। শুরুতে ৩ হাজার মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ১০ হাজার মানুষকে খাবার সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে তার। ৩ হাজার হতদরিদ্র প্রতিটি পরিবারের জন্য থাকছে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক লিটার তেল, এক কেজি আলু, একটি সাবান ও মাস্ক। দরিদ্রদের কাছে তার এই খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করবে ‘বিডি ক্লিন’ নামের একটি সংগঠন।করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ১০ দিনের ছুটিতে দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষও।ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান মঙ্গলবার একটি টিভি টকশোতে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার থেকে দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত চাল ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোথাও খাদ্যের কোনো সমস্যা হবে না। যেখানে যতটুকু চাহিদা থাকবে ততটুকুই সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারা এই সহায়তা পাবেন—সেই তালিকা চূড়ান্ত করবেন জেলা প্রশাসকরা। প্রয়োজনে আরো সহায়তার জন্য বরাদ্দ দিতেও সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি জেলায় ২০০ থেকে ৫০০ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা। জেলাগুলোর আয়তন ও জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে ঐ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। লকডাউন হওয়া এলাকাগুলোয় খাদ্য সহায়তা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আর কোথাও ওষুধ বা অন্য কোনো সহায়তা দরকার হলে তা নগদ টাকা দিয়ে কিনে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।এছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ লাখ ১০ হাজার খাবারের প্যাকেট তৈরি করা হয়েছে। তাতে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আটা, ২ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি, ১ লিটার তেল ও নুডলস দেওয়া হয়েছে।জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী এসব খাবারের প্যাকেট জেলাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হবে।