সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রোজায় পণ্যের সংকট হবে না। সংকট না থাকলেও রোজার আগে নিত্যপণ্যের বাজার উত্তাপ ছড়াচ্ছে। চাল, ডাল, চিনি, সবজিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আরো বেড়েছে।
গত বছর এই সময় বড় দানার মসুর ডালের দাম ছিল ৫৫ টাকা কেজি। কোথাও তা ৬০ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু গতকাল বুধবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, পণ্যটির দাম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে, বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। বড় দোকানগুলোতে অনেক পণ্য কিনলে ৯৫ টাকা রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের এ পণ্যের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।
বিক্রেতারা বলছেন, বড় দানার মসুর ডালের চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে। তার ওপর রোজা সামনে রেখে চাহিদা আরো বেড়েছে। তা ছাড়া ত্রাণ হিসেবে বেশির ভাগ মানুষ এই ডালই দিয়ে থাকে। ফলে এর দাম বেড়েছে অনেক। তবে ছোট দানার মসুর ডালের দাম তুলনামূলক বেড়েছে কম। ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর গোপীবাগ, মলিবাগ, মুগদা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রোজার আগে চালের বাজার আরো চড়েছে। আগের সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল বিআর-২৮ ছিল ৪৫ টাকা কেজি, এখন ৪৬ টাকা, পাইজাম ছিল ৪২, এখন ৪৪ টাকা, স্বর্ণা ছিল ৪০, এখন ৪২ টাকা, লতা ছিল ৪৪, এখন ৪৬ টাকা এবং বিআর-২৯ আগের মতো ৪৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময় এসব মোটা চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা কেজি। এ ছাড়া নাজিরশাইলের মধ্যে ভালো মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি পর্যন্ত। গত সপ্তাহে কাটারি নাজির ছিল ৬০ টাকা, এখন ৬২ টাকা, জিরা নাজির ছিল ৫৬, এখন ৫৪ টাকা কেজি। মিনিকেট হিসেবে পরিচিত চাল আগের মতো মানভেদে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
মানিকনগর বাজারের চাল ব্যবসায়ী মরিয়ম স্টোরের মালিক মো. আলমগীর বলেন, বিভিন্ন পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রায়ই করোনার ভয়ে দোকান বন্ধ রাখেন। যাঁরা খোলা রাখেন, তাঁরা দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ান। অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। তাঁর পরিচিত এক চালের আড়তকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বেশি দামে বিক্রির দায়ে। আড়তে দাম বাড়লে তাঁদের কিনতে হয় বেশি দামে। আর এভাবেই পণ্যের দাম বাড়ে। তিনি বলেন, বাজারে নতুন চাল আসা শুরু হয়েছে, আগামী সপ্তাহে দাম কমে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
রোজার পণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল।
খোলা সয়াবিন এখনো ৯৫ টাকা, পাম তেল ৭৫ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন ১১০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
মসলাজাতীয় পণ্যের দামও বেড়েছে অনেকাংশে। গত বছর এ সময় পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। দেশি রসুন ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, এখন ১২০ টাকা। চীন থেকে আমদানি করা আদা ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, এখন তা ৩০০ টাকা কেজি।
এত দিন সবজি বিক্রি হয়েছিল কম দামে। রোজার তিন দিন আগে গতকাল সবজির দামও অনেক বেশি দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু ২৫ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, শসা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবু ছোট হালি ২৫ টাকা ও কাঁচা মরিচের কেজি ৫০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা বেড়েছে। ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার এখন ১৩০ টাকা কেজি। তবে এর পরও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় কেজিতে ৩০ টাকা কম। খামারের মুরগির ডিম ২৫ টাকা হালি ও গরুর মাংস ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারগুলোতে।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।