সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) : করোনা যুদ্ধের এ পর্যায়ে এসে একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন সামনের সারির যোদ্ধা পুলিশ সদস্যরা। সংকট যখন বেড়েই চলেছে তখন বিশেষজ্ঞদের মত, শারীরিক সুরক্ষার পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ধরে রাখতে এখনই নিতে হবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা। অন্যদিকে, সব পুলিশ সদস্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, যে কোনো সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন তারা। যুদ্ধটা শুরু গত ৮ মার্চ। প্রায় দুই মাসের এই করোনা সংগ্রামে চিকিৎসকদের মতোই সামনের সারিতে থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, প্রতিটি প্রয়োজনে নাগরিকদের পাশে রয়েছেন বন্ধুর মতোই। তবে জীবাণুর বিরুদ্ধের এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১৮ মে পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২৬৬১ জন পুলিশ সদস্য। অন্যদিকে, মারা গেছেন ৫ জন পুলিশ সদস্য। যখন বাহিনীটির একের পর এক সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন । আর পুলিশের এসআই তন্ময় মন্ডল কি ভাবে সুস্থ হয়েছেন তা বলেছেন। আইসোশনে থেকে করোনার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া এই পুলিশ অফিসার বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানায় কর্মরত আছেন। করোনাকে জয় করার পর তিনি বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনি আমার সংবাদকে জানিয়েছেন করোনা জয়ের সেসব অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, আইসোলেশনে থাকাকালীন হাসপাতালের ডাক্তারের তত্বাবধানে নিয়মিত ঔষধ সেবন করেছি। আর সাথে আদা,রসুন,লবঙ্গ, এলাচি,দারুচিনি,গোলমরিচ, তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে ওই পানি বার বার পান করেছি এবং ওই পানির বাষ্প মুখও নাকে দিয়ে যতটা সম্ভব টেনেছি। এক্ষেত্রে বাষ্প টানার জন্য একটি পাত্রে ফুটন্ত পানি নিয়ে মাথা তোয়ালে বা গামছা দিয়ে ঢেকে দিয়ে বাষ্প বা পানির ভাপ নিয়েছি। তোয়ালে ভিজিয়ে নাকে চেপে ধরে পরিষ্কার করেছি, যাতে করে নাকে থাকা জীবানু মারা যায়। এরপর কালোজিরা ও মধূ সেবন করেছি নিয়মিত। সবসময় গরম পানি খেয়েছি,গরম পানিতে লবন মিশিয়ে গারগলা করেছি। গরম পানি দিয়ে গোসল করেছি। বালিশের কভার, বিছানার চাঁদর, পরিহিত জামা প্যান্ট গরম পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়েছি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেয়েছি। যেমন মাল্টা, আনারস, লেবু জাতীয় ফল খেয়েছি। মন ভালো রাখার জন্য পছন্দের গান ও পুরষ্কার প্রাপ্ত মুভি দেখেছি। পরিবারের মানুষজন ও বন্ধু বান্ধবের সাথে সার্বক্ষনিক ফোনে কথা হতো তারা সব সময় খোজ খবর নিয়েছে। সাহস যুগিয়েছে, মনোবল হারাতে দেয়নি, মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রার্থনায় আজ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমার মত যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হয় তবে তাদের উদ্দেশ্য আমার একটাই কথা থাকবে। করোনাকে ভয় নয় মনোবল চাঙ্গা রেখে যুদ্ধ করে এটিকে প্রতিরোধ করে ঘরে ফিরে যান এবং জণসাধারণের উদ্দেশ্য বলবো করোনা সংক্রমণ থেকে বাচতে হলে অবশ্যই নিরাপদ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। জণসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত না ধুয়ে নাক মুখ ও চোখে হাত দেওয়া যাবে না। মুখে অবশ্যই মাক্স পরিধান করতে হবে। আমাকে করোনাযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সাহস যুগিয়েছেন এসপি স্যার, সার্কেল এএসপি স্যার ও ওসি স্যার সহ সকল পুলিশ সদস্যগণ এবং উর্ধ্বন কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক খোজখবর নিয়েছেন। বিশেষ করে আমি ধন্যবাদ জানাই বন্ধু বান্ধব আত্নীয়স্বজন এবং সিরাজদিখান উপজেলা বাসীকে। তারাও আমাকে করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে সাহস যুগিয়েছেন।