করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর পুরো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণার দাবিতে ও চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি শুনানির জন্য তালিকায় রয়েছে।
রিট আবেদনটি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চে রোববারের (১৪ জুন) শুনানির কার্যতালিকায় (কজ লিস্ট) রয়েছে।এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাজধানী ঢাকা মহানগরীর পুরো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণার দাবিতে রিট আবেদনটি করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবির) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি আইনজীবী মো. মাহবুবুল ইসলামের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন। রিট আবেদনে ঢাকা শহরকে লকডাউন ঘোষণা এবং চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহের দাবি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব (হাসপাতাল ও প্রশাসন), অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), পুলিশ কমিশনার এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে। রিটে বলা হয়েছে, পুরো ঢাকা শহর লকডাউনের পর উক্ত সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়ররা কমিশনারদের মাধ্যমে প্রতি এলাকায় প্রয়োজনে গরিবদের খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করবেন। এ কাজে সরকার সার্বিক সহযোগিতা করবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য করোনাকালে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা শহরে হাজার হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে এক হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ১৮ এপ্রিল সরকার প্রফেসর মো. শহিদুল্লাহকে সভাপতি করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি গঠন করার পর পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় উক্ত কমিটি সর্বশেষ গত ৮ জুন এক সভায় সর্বসম্মতভাবে করোনায় মৃত্যু কমানোর জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয় এবং কার্যকরী সুপারিশ প্রদান করে। রিট আবেদনে পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকা শহরে এখন ভাইরাসটি যেভাবে ছড়িয়েছে এবং আতঙ্কজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত মেনে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, মৃত্যু ঠেকাতে ঢাকা শহরকে লকডাউন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই নির্দেশনা অমান্য করায় মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। কাজেই জীবন রক্ষায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামতই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলভিত্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রম অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর ছুটি না বাড়ানোর ফলে শেষ হয় সরকারঘোষিত টানা ৬৬ দিনের ছুটি। এটিই ছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা ছুটি।
তবে যে কারণে দীর্ঘ এ ছুটি সরকার ঘোষণা করেছিল দৃশ্যত তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কারণ, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কোনো উন্নতি এখনো দেশে দৃশ্যমান নয়। প্রতিদিনই বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্তর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।
সে অনুযায়ী ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বিশেষজ্ঞরাও। সরকারি হিসাবে, দেশে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গেছেন এক হাজার ১২ জন।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।