ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ কর্তৃক জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আশুগঞ্জ উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
শনিবার (০৪ জুলাই) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, বিগত ৮ মাস পূর্বে জাবেদ মাহমুদ আশুগঞ্জ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর থেকেই আশুগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ সহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে দুর্ব্যবহার, অসদাচরণ ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে আসছেন। দুর্ব্যবহার, অসদাচরণ শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উপজেলার তালশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু শ্যামা, তারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস হাসান, চরচারতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন খন্দকার। এছাড়াও আমার সঙ্গেও তিনি দুর্ব্যবহার করেছেন। আক্ষেপ করে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন আরো বলেন, ‘গত ২ জুলাই আমার নিজ গ্রাম সোনারমপুর স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক আশিকুর রহমান রনির বাড়িতে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ ফোর্স নিয়ে গিয়ে ওসি জাবেদ মাহমুদ তার সাথে দুর্ব্যবহার করা শুরু করেন। এসময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত হাজির হই। পরে আমি সাংবাদিক রনির সাথে খারাপ আচরণের বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে তিনি আমার সাথে দুর্ব্যবহার এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন।’ এক পর্যায়ে আমাকে ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, ‘তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করার কে? তোকে থানায় নিয়ে শায়েস্তা করবো। এক পর্যায়ে ওসি জাবেদ মাহমুদ আমাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয়দের বাধার মুখে আমাকে নিতে পারেননি। আমি একজন জন প্রতিনিধি হিসেবে আমার সাথে এমন আচরণ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।’
লিখিত বক্তব্যে সালাউদ্দিন আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘তার (ওসি জাবেদ মাহমুদ) যোগদানের পর থেকে আশুগঞ্জে মাদক, জুয়া, চুরি ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে গত ২৭ জুয়ার বোর্ডে একজন জুয়াড়ি খুন হয়। আমরা জনপ্রতিনিধিরা তার অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আইজিপি’র দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার অবিলম্বে অপসারণ দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন, চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন খন্দকার, দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু, তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু শ্যামা, আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়া ও শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে সাংবাদিক সম্মেলনে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক আশেকুর রহমান রনি ফেসবুকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আজেবাজে ভাষায় লেখালেখি করেছেন। এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত ২ জুলাই আশুগঞ্জ থানায় মামলা হয়। আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পরে ওইদিন রাতে আসামি ধরার জন্যে আশুগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক এবং মামলার আইও ভক্ত চন্দ্র দত্ত আশুগঞ্জ সোনারামপুর গ্রামে রনির বাড়িতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর খবর পেয়ে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সালাহ উদ্দিন সেখানে লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে আসামি রনিকে গ্রেপ্তারে বাধা দেয়। পরে খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। এর আগেই চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় আসামি রনি পালিয়ে যায়। বিষয়টি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে আমি পুলিশ ফোর্স নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।’ ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি গত ৬ মাস হয়েছে এই থানায় যোগদান করেছি। মাদক জুয়ার বিরুদ্ধে আমি সহ আশুগঞ্জ থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। অনেক মাদক ধরা পড়েছে। জুয়া খেলা বন্ধ করেছি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।’
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।