অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো বসলো ৪০তম স্প্যান, দৃশ্যমান পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ।শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল দশটার ১৫মিনিটের দিকে মাওয়ার অংশে পদ্মার মাঝনদীর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে স্প্যানটি বসানো হয়। আর মাত্র ১টি স্প্যান বসলেই দৃশ্যমান হবে পুরো পদ্মা সেতু। তবে বাকি স্প্যানটি বসবে আগামী সপ্তাহে। কাজের শুরু থেকে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্প্যান বসেছে গত দু মাস অক্টোবর ও নভেম্বরে।
প্রতিমাসে রেকর্ড ৪টি করে বসেছে ৮টি স্প্যান। মাওয়া প্রান্তে যেখানে মাত্র দুইটি স্প্যান ছিলো, সেখানে এখন পুরো ১০টি স্প্যানে দৃশ্যমান দেড় কিলোমিটার সেতু। পাড়ের সাথে সেতুর মিলন ঘটেছে, এখন দুই প্রান্তও মিলবে এ দুটি স্প্যান বসানো হলে। সেতুর কাজের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবশেষ যে স্প্যানটি গত ২৭ নভেম্বর বসেছে, সেদিন শুক্রবার তার পাশেই ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে বসানো হয় নতুন স্প্যান। তবে এ স্প্যানটি বসাতে কারিগরি কিছু কাজ আগে সেরে রাখার উদ্দেশ্যে একদিন আগেই বৃহস্পতিবার এটিকে পিলারের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়।আজ শুক্রবার পিলারের উপর তোলার আগ পর্যন্ত মাঝনদীতে স্প্যানবাহী ক্রেনটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেনাবাহিনীর টহল বোট। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় স্প্যানগুলো। বহুমুখী এ সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।এ সেতুতে মোট ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সব কয়েকটি পিলার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। শিগরই বাস্তব রুপ নিতে যাচ্ছে ১৬ কোটিমানুষের অধ্যুষিত দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নগুলো।দেশের সর্ববৃহতম মেগাপ্রকল্প পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোগত নির্মাণপ্রস্তুতি এখন চলছে জোরেশোরে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপনের ১৫ বছর পর পদ্মার বুক চিড়ে ডানা মেলে উঠতে শুরু করে স্বপ্নের এই সেতু। কেননা সে সময় সেতুর ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপনের কয়েকদিন পূর্বে সেতুর সুপারস্ট্রাকচার বা উপর কাঠামোর সরঞ্জাম (স্প্যান) স্থাপনের জন্য“টিয়ানইহাও” নামের একটি ভাসমান ক্রেন মাওয়া প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে। আর এ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান ক্রেন দিয়েই সেতুর স্প্যান বসানোর মাধ্যমে রূপ ধারণ করতে শুরুকরে সেতুর আকার। সেতুর সিডিউলে বলা হয়ে থাকে রাতে সেতু আলোকিত হবে লাল – সবুজ রঙে। পদ্মা সেতু দুমদুম শব্দতরঙ্গে মুখর কাটিয়ে জার্মানি থেকে আনা মেনকের ২৪০ টন শক্তিসম্পন্ন হাইড্রোলিক হ্যামার দিয়ে নদীর বুকে যেই পিলার বসানোর কাজ শুরু-করেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। তা এখন প্রায় ভুলেগেছেন প্রকৌশলিরা কারন – সেই সময় টি ছিল নদীর বুকে পিলার পোঁতার কাজ । তবে ২০২০ শালে এসে আলোচিত সেই পদ্মাসেতুর কাজ সরকারের কঠিন ইস্যু হলেও তার কর্ম চিত্র আজ সম্পূণ প্রায় । দেশের ১৫ ভাগ / জনঅধ্যূষিত চলমান রয়েছে বছর জুড়ে পদ্মা নদী পাড়িদিয়ে মাওয়ার শিমুলিয়া- মাদারীপুরের- জাজিরা ও কাঠালবাড়ি নৌরুটের। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চলাচলকারী বাসিন্দাদের কাছে সবচেয়ে বেশী আলোচিত ইস্যু ছিল সেতু। দেশে বিগত পঞ্চাশ বছরের পড়ে সবচেবে বড় অবকাঠামো এই সেতুর কাজ। এটি একটি আলোচিত ইস্যু হলেও তার সব সংকময় কাটিয়ে এবার তা চিত্র সম্পূর্ণ দীর্ঘদিন পর এবার পদ্মা সেতুর বাস্তব নির্মাণকাজ দেখতে পাচ্ছেন। পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন শ্রেণীর দেশবাশী। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চলাচলকারী মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এখন তাদের বাস্তবের চিত্র থাকলেও। তাদের কাছে একটিই প্রশ্ন কবে শেষ হবে এর বাস্তব নির্মাণকাজ। মূল সেতুর কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে এক যুগেরও বেশী সময় ধরে ক্ষীণ হয়ে থাকা ১৬ কোটি জন অধ্যুষিত দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নগুলো পূরণ হতে চলেছে।যেন শীতের ঘন কুয়াশাকে ভেদ করে ভোরের সোনালী ঝলমল রোদে আশার আলো জেগেছে মাওয়ার পদ্মাপাড়ে।