মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ মাওয়া-
পদ্মাসেতু তৈরির কাজ শুরুর আগেই একেবারে প্রথম পর্যায়ে স্থাপন করে পদ্মাসেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। পদ্মাসেতুরকাজের জন্য গড়ে তোলা বিশাল ওয়ার্কশপ এটি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে এখন বলেই তার কাজের ইস্তবিরতা। এ টি মুন্সীগঞ্জের পদ্মাসেতুরপারে লৌহজং উপজেলার মাওয়ার পার্শ্ববর্তী কুমারভোগে কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড। প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বিশাল এই ইয়ার্ড টি । ইয়ার্ডের ভেতরেই ৫শ মিটার অর্থাৎ আধা কিলোমিটার লম্বা এবং ২শ মিটার চওড়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ওয়ার্কশপটি আরকাজে নালাগায় ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর ভিতর তৈরিসহ নিচের সব স্ট্রেকচার সম্পন্ন। এখন চলছে সেতুর ওপরের তলার সুপার স্ট্রাকচারসহ শেষ পর্যায়ের কাজ। বিশাল এই ওয়ার্কশপেই সেতুটির পাইল টিউব থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সেতুর প্রায় সব কিছুই তৈরি করাহয়েছে ওয়ার্কশপটিতে। কিন্তু এখন সেই কর্মচঞ্চল ইয়ার্ড আর থাকছেনা । দেশী-বিদেশী হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মব্যস্ততায় রাত-দিন থাকত মুখরিত। এখানে এখন স্তবদ্ধতা। ওয়ার্কশপটির ভেতরে রয়েছে আধুনিকসব যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে শুধু নয়, সারা বিশ্বে বিরল। বিশ্বের অদ্বিতীয় সেতু ‘পদ্মা সেতু’ নির্মাণে খাঁচ কাটা পাইলসহ নানা কিছু তৈরি করা হয়েছে এউ ওয়ার্কশপে। পদ্মাসেতুর কাজের সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি রয়েছে ওয়ার্কশপটিতে। এই যন্ত্রপাতিও সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেতুতে চীনা ঠিকাদারি কোম্পানি শতাধিক ভারি ভারি যন্ত্র ব্যবহার করেছে।ইতিমথ্যে অনেকইযন্ত্র চীনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই যন্ত্রপাতির সঙ্গে ঠিকাদারির প্রতিষ্ঠান চয়ানা মেজর ব্রিজ কোম্পানির মালামালও কিছু পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন বাকি মালামালও পাঠানো বা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। গত বছর এই মৌসুমে অর্থাৎ ৩১ জুলাই পদ্মার আকস্মিক ভাঙ্গনে ইয়ার্ডটির একটি অংশ বিলীন হয়ে যায়। সে সময় পদ্মা সেতুর ১৯২টি রেলের লোহার স্ট্রেনজারসহ সেতুর বেশ কিছু স্ল্যাব ও যন্ত্রপাতি পদ্মায় তলিয়ে যায়।তবে এবার ভাঙ্গনের আশঙ্কা না থাকলেও যেহেতু কাজ শেষ হয়ে গেছে, তাই নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইয়ার্ডটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিডেট এই স্থাপনাগুলো সেতু তৈরির কাজ শুরুর আগেই একেবারে প্রথম পর্যায়ে স্থাপন করে।
পদ্মা সেতুর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পদ্মাসেতুরচালুর পর এক বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবে ঠিকাদারি এ প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী ১০ বছর সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ করবে চীনা ও কোরিয়ান কোম্পানি যৌথভাবে। এছাড়াও চীন সরকার সেতু বিভাগের অধিগ্রহণকৃত এই জায়গাটিতে একটি উন্নয়ন জোনের অফিস করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।বাংলাদেশের প্রচুর উন্নয়ন কাজ চলমান আছে চীনা প্রতিষ্ঠানের। চীনা সরকারী সব প্রতিষ্ঠান ঠিকাদার হিসেবে বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করছে। কোম্পানিগুলোর একটি কান্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এটিও সরকারের নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া এই বিশাল স্থানটি পর্যটনের জন্য পার্শ্ববর্তী মাওয়া মৎস্য আড়তের সাথে যোক্তকরে একটি ফাইভ স্টার সমমানের রিসোর্ট তৈরির পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও আলোচনা চলছে। অর্থাৎ পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের একেবারে লাগ ঘেঁষা ভাটি থেকে শিমুলিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ইয়ার্ডটির চেহারা বদলে যাচ্ছে। পদ্মা তীরের নির্মল ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিটি আরও আকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে। এদিকে মূল পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ২৫। সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশের বেশি।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।