নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে, অলিগলিতে ইলিশ বিক্রেতাদের হাঁকডাক শোনা গেছে।
মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ, মাওয়া মুন্সীগঞ্জ।
ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত কাল সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়। এর পরই রাত ১২টার পর থেকে নির্বিঘ্নে আবার ইলিশ শিকার করতে শুরু করেন জেলেরা। সরকারের নিতিমালা ছিল২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। প্রজনন নিরাপদ করার জন্য ৩ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল। প্রতি বছরের মতো এবারও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন, বাধা দিতে গেলে প্রশাসনের ওপর হামলাসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে মুন্সীগঞ্জ ও মেঘনা সহ নদীতীরবর্তী জনপদে।
তবে মৎস্য অধিদপ্তরের মুন্সীগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের বিভাগীয় সূত্র দাবি করেছে, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে ৯৫ ভাগ সফল হয়েছে ।এ বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন জেলে সংগঠনের নেতারা।
মুন্সীগঞ্জ মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি অভিযান চালানো হয়েছে।
তবে ইলিশ নিধনের দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে গত বছরের চেয়ে অনেক কম সংখ্যক জেলেকে। মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এ বছর ২২ দিনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সফলতা ৮০ ভাগের বেশি হবে না। এ বছর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও মেঘনায় বেপরোয়াভাবে ইলিশ নিধন করা হয়েছে। অভিযান চালাতে গিয়ে লৌহজংয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানা পুলিশ ও মৎস্য অফিসারের জাহাজের ওপর হামলাসহ একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
জেলার জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির নেতা সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আঃ রশিদ সিকদার বলেন, ইলিশ নিধন বন্ধ রাখতে প্রশাসনের চেষ্টা ছিল। কিন্তু নদীতীরবর্তী জনপ্রতিনিধিদের অসহযোগিতার কারণে পুরোপুরি সফল হওয়া যায়নি।বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জের কহেক টি মাছঘাট মালিক ও আড়ৎদার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি প্রতি বছরের মতো এবারও বেপরোয়া ছিলেন। জেলা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক দের দেয়া তথ্য বলছে, এবার হামলার ঘটনায় মৌসুমি জেলে এবংস্থানিয় নেতাকর্মি জড়িত ছিল। অভিযান চালাতে গিয়ে লৌহজংয়ে একজন পুলিশ সদস্য নদীতে পড়ে আহত হয়েছেন। একই উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা হামলার শিকার হন। ইউএনও হামলার শিকার হয়েছেন। ভূমি কর্মকর্তা ও হামলার শিকার হন।
এসব ঘটনায় কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মামলা করছে। তারা জেলায় রিপোর্ট দিচ্ছে। এত সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এবার ৯০ ভাগ মা ইলিশ রক্ষা করা গেছে বলে দাবি এ কর্মকর্তাদের।
সর্বশেষ গেল রোববারে লৌহজংয়ে নিষিদ্ধ মা ইলিশ শিকারের অপরাধে ৩৫ জেলেকে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়। এসময় ৩৫ জেলের কাছ থেকে ৭০ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ২০ কেজি ইলিশ ও মাছ ধরার ৭টি ট্রলার জব্দ করা হয়। পরে রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদলতোর নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাউছার হামিদ ১৯ জনকে ৭ দিনের কারাদন্ড, ১৬ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী হওয়ায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেন। সেই সঙ্গে আটককৃত ইলিশ স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বণ্টন করে দেওয়া হয় ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল আগুনে পুড়ে ফেলাহয়।
তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে । ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর গত কাল সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়।আবার সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণের ইলিশের মোকামগুলোর অন্যতম ঘাটের মাওয়া মৎসআড়ৎটি সোমবার রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও মঙ্গলবার সকালেই মাওয়া নগরীর মৎস ঘাটে শত শত মণ ইলিশের আমদানি হয়। ক্রেতা ছিল অনেক। আমদানি বেশি হওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম ছিল তুলনামূলক কম। নগরীর অলিগলিতে ইলিশ বিক্রেতাদের হাঁকডাক শোনা গেছে। তবে খুচরা দাম অনেক বেশি ৭শ থেকে ১৫শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।