মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরের গাংনীতে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লংঘন করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে চলছে অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন। গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বাচ্চু, মৃত কাদের বক্সের ছেলে বাবলু এবং মৃত ইউনুস আলীর ছেলে হোসেন ও মৃত নূর হকের ছেলে জামরুলসহ আরো কয়েকজন মিলে ২ টি গ্রুপে মাইলমারী পদ্মবিল থেকে মাটি উত্তোলন করে তা বিক্রি করছেন।
গোরস্থানের রাস্তা তৈরি, জনগণের খাদ খন্দক ভর্তি ও পাট জাগের জন্য পদ্মবিল খননের নামে নির্বিঘ্নে সকাল ৬ টা থেকে মধ্যরাত অবধি ব্যাপক হারে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। পদ্ম বিল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের পর তা পরিবহনের জন্য পাকা সড়ক ব্যবহার করায় মাটি বোঝাই যন্ত্রদানব ট্রাক্টর চলাচল করার কারণে রাস্তায় মাটি পড়ে তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধুলাবালিতে সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সর্বস্তরের জনসাধারণকে। ধুলাবালি উড়ে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল। এসব ধুলাবালির কারণে কোন কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তিনারা অন্যত্র কিংবা বাড়িতে অবস্থান করছেন। এদিকে মাইলমারী গ্রামে ২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ টি প্রি-ক্যাডেট ও ২ টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় সকল সড়ক দিয়ে কোমলমতি শিশুরা তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়া ও ফেরা নিয়ে শংকিত তাদের অভিভাবকগণ। না জানি কখন দ্রুতগামী মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের চাপায় কোন মায়ের বুক খালি হয়! সরেজমিনে মাইলমারী পদ্মবিলে মাটি উত্তোলনের জায়গায় যাওয়া হলে সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বাচ্চু ও তিনার সহযোগীদের তাস খেলা অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রথম দিকে জনগণ মাটি উত্তোলন করছেন তিনারা লেবার বলে পরিচয় দিলেও পরে সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করতে কিছু অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনারা বলেন, কিছু কিছু সাংবাদিক আসছেন তাদের কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করা হচ্ছে। তবে তিনারা ক্যামেরার সামনে আসতে রাজি হয়নি। এলাকাবাসীদের সাথে আলাপকালে তিনারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে গোরস্থানের রাস্তা তৈরি করবেন এমন কথা শোনা গেলেও তার কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে মাটি বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতি ট্রাক্টর মাটি ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। সাংবাদিক কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসলেই সেট করা লোকে খবর দিলে পালিয়ে যায় ঘটনাস্থল থেকে। প্রতিটা সড়কেই নাকি লোক সেট করা রয়েছে। বাচ্চু মেম্বার ও তিনার সহযোগীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও তিনারা জানান, মেম্বারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও মাটি বিক্রি লাভজনক হওয়ায় বাপ-বেটা মিলে মাটি বিক্রিতে নেমেছে দোকান বন্ধ রেখে। মাইলমারী পদ্ম বিল থেকে শুরু করে হিন্দা, হিজলবাড়ীয়া, কুলবাড়িয়া, নওপাড়া ও লক্ষ্ণীনারায়ণপুর যাওয়াসহ গ্রামের প্রতিটা সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। বৃষ্টি হলে কি অবস্থা হবে তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এভাবেই গোরস্থানের রাস্তা তৈরির নামে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অসাধু মাটিখোর ব্যবসায়ী বাচ্চু মেম্বার ও তিনার সহযোগীরা মাটি বিক্রি করে গত কয়েকদিনেই আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। এবিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতুকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। যেই কথা সেই কাজ। সোমবার (১৫ মে), গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম ও গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম মাইলমারী পদ্ম বিলে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু কর্মকর্তারা আসার সংবাদ পেয়ে মাটি খেকোরা পালিয়ে যায়। এমতবস্থায় প্রাথমিক ভাবে ভেকু ও একটি মাটিবাহী গাড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়েছে। একই সাথে মাটি না উত্তোলনের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা সহকারী কমিশনার জানিয়েছেন। আবারও যাতে মাটি উত্তোলন না করতে পারে এবিষয়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী। মাজিদ আল মামুন মেহেরপুর প্রতিনিধি
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।