লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি কোনো কিছুই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টানতে পারছে না। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। মাত্র দেড় মাসে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৯টিতেই জাল বিস্তার করেছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। দেশের বিভাগ ও জেলা হিসেবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকার। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঢাকায়। এর মধ্যে রাজধানীর ১০ এলাকায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১৪ জন শনাক্ত ও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনার রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল চার হাজার ১৮৬ এবং মৃতের সংখ্যা ১২৭। এ ছাড়া এই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১৬ জন। এ নিয়ে সুস্থ হলেন ১০৮ জন।
অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে আরও তিনটি জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। এর ফলে আক্রান্ত জেলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯টিতে। নতুন আক্রান্ত তিনটি জেলা খুলনা বিভাগের। করোনার থাবা থেকে এখনো মুক্ত আছে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ভোলা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা।
দেশে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর)। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। এর পর ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৪ দিনে করোনা আক্রান্ত ৫১ জন শনাক্ত এবং ৫ জনের মৃত্যু হয়। এপ্রিলে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে ২১টি প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে। এক মাস আগে অর্থাৎ মার্চের ২৩ তারিখে আক্রান্ত ছিল মাত্র ৬ জন আর এপ্রিলের ২৩ তারিখে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪১৪ জন। এক মাসে রোগী ৬ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ১৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এই আক্রান্তের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৩৬ শতাংশই ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা শহরে ৪৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং বিভাগের অন্য জেলাগুলো মিলে ৩৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ঢাকা শহরে রোগী শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬৮৩ জন এবং বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে এক হাজার ৩৮২ জন। রাজধানীর ১০টি এলাকায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এগুলো হচ্ছে রাজারবাগ, মোহাম্মদপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, চকবাজার, মিরপুর, উত্তরা, তেজগাঁও এবং মহাখালী।
ঢাকা বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ নারায়ণগঞ্জে, যেখানে শনাক্ত হয়েছে ৫৩২ জন। এরপর গাজীপুরে ২৯২, কিশোরগঞ্জে ১৭৯ ও নরসিংদীতে ১৪১ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা, যার হার ২৪ শতাংশ। এরপরই আছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা (২২ শতাংশ), ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৮ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ শতাংশ, ৬০ বছরের বেশি ১০ শতাংশ এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের কম ৩ শতাংশ।
ভিআইপি হাসপাতালের খবর ঠিক নয়
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ৪৫ দিনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশে গত ৪৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৭৭২ জন এবং মারা গেছেন ১২০ জন। ইতালিতে একই সময়ে আক্রান্ত এক লাখ ৬৩ হাজার ও মারা গেছে প্রায় ১১ হাজার। স্পেনে আক্রান্ত এক লাখ ও মৃত্যু ১০ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত এক লাখ ২০ হাজার ও মৃত্যু ২৪ হাজার। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩০০ জনের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল তৈরি হচ্ছেÑ এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি ঠিক নয়। সরকার এ রকম কোনো ব্যবস্থা করেনি। সবার জন্যই একই হাসপাতাল ও একই চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের বিবৃতি দেবেন না। যার কারণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, যা সরকারি নীতিবহির্ভূত।
৮ হাজার চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ হচ্ছে
মন্ত্রী বলেন, কোনো হাসপাতাল লকডাউন হয়নি এবং হবে না। অন্যান্য হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা বজায় আছে এবং থাকবে। আমাদের সব হাসপাতালে যেসব ওষুধ সরকার দিয়ে থাকে, সেগুলো সরবরাহ এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। শিগগিরই দুই হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতেই এই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে ২১টি প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে। এসব ল্যাবে পরীক্ষার জন্য ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৯২১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪১৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং নমুনা পরীক্ষা ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এখন পর্যন্ত দেশে ২৫ হাজার ৯০টি পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৬৮ শতাংশ ও নারী ৩২ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৫ জন ও নারী দুজন। তারা সবাই রাজধানীর বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুজন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন।
অধ্যাপক নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১২৩ জনকে, এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ৯৯৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৮ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬২২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩ হাজার ৪২৯ জন, এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৪৮ জন, এখন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭ হাজার ৮৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় ৩ হাজার ৯৭৭ জনকে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫০ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪১ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৮৪ হাজার ১৭ জন।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।