প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনা বিভাগের ৬টি জেলার ১৯৭টি ইউনিয়নে মৎস্যখাতে কমপক্ষে ২৮৪ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে মাছ বেরিয়ে গেছে মৎস্যঘের, পুকুর ও নদী থেকে। ভেঙে গেছে মৎস্য প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো। ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাদা মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুচিয়া উৎপাদনকারীরা। বিভাগের ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি জেলার মধ্যে খুলনায় ৯৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৩ হাজার টাকার, বাগেরহাটে ৫ কোটি ৭১ লাখ ২৭ হাজার টাকার, সাতক্ষীরায় ১৭৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার, ঝিনাইদহে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার, চুয়াডাঙ্গায় ২ কোটি ৬১ লাখ ৯৪ হাজার টাকার ও মাগুরায় ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিভাগীয় মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আম্পানের কারণে ৭টি বিভাগে পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১ হাজার ৫৯২ দশমিক ১২ হেক্টর জমিতে থাকা ৮ হাজার ৯২৮টি পুকুর ও দিঘি। এরমধ্যে কুচিয়া ও কাঁকড়ার চাষ হতো ৬১৩টি পুকুর ও দিঘিতে। এছাড়াও ২৪ হাজার ৭৬২ দশমিক ৩৫ হেক্টর জমিতে থাকা ২২ হাজার ২৪৭টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ৩ হাজার ১৬০ দশমিক ১২ মেট্রিক টন সাদা মাছ ও ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার পিস সাদা মাছের পোনা, ৩ হাজার ৬৩৫ দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন চিংড়ি ও ২৯ কোটি ৩৮ লাখ পিস চিংড়ির পোনা (পিএল) এবং ৪২ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন কাঁকড়া ও কুচিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাঈদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনার ৫টি উপজেলার মৎস্যখাতে ৯৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৩ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়রায় ৫১ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার, দাকোপে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকার, পাইকগাছায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার, ডুমুরিয়ায় ২৬ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ও বটিয়াঘাটায় ৮ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আম্পানের আঘাতে খুলনার ৫ উপজেলায় ২৯ কোটি ২৫ লাখ ৯ হাজার টাকার সাদা মাছ, ৫৯ কোটি ৪২ লাখ ৬ হাজার টাকার চিংড়ি মাছ, ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সাদা মাছের পোনা, ১ কোটি ২৮ লাখ টাকার চিংড়ি মাছে পোনা (পিএল), ৯৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার কুচিয়া এবং ৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে ৬২৫ দশমিক ৮১ হেক্টর জমিতে থাকা ৮ হাজার ৯৬টি পুকুর ও দিঘি (কুচিয়া ও কাঁকড়ার ২৪০টিসহ), ৮ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৮ হেক্টর জমিতে থাকা ৬ হাজার ৮৬৬টি সাদা মাছ ও চিংড়ি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ১ হাজার ১৭৬ দশমিক ৯ মেট্রিক টন সাদা মাছ ও ১ কোটি ৫ লাখ পিস সাদা মাছের পোনা, ১ হাজার ৪৭ দশমিক ৯ মেট্রিক টন চিংড়ি ও ১ কোটি ৪০ লাখ পিস চিংড়ির পোনা (পিএল) এবং সাড়ে ১৭ মেট্রিক টন কাঁকড়া ও কুচিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাইকগাছা উপজেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ঘের ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, গত এক বছর ধরে দুর্যোগের কবলে থাকলেও করোনার প্রভাব মারাত্মক। আর আম্পানের আঘাতে সব স্বপ্নেরই সলিল সমাধি হয়েছে।
পাইকগাছার চিংড়ি ব্যবসায়ী লিটন পরামানিক বলেন, করোনার প্রভাবে মাছ রফতানি বন্ধ। দেশের বাজারেও ক্রেতা নেই। তাই বেকার অবস্থায় দিন কাটছে। কয়রা বাগালি ইউনিয়নের বাগদা চাষি মফিজুল ইসলাম জানান, গরমের কারণে ঘের-পুকুরে চিংড়ি মরে। গরমে ঘেরে পানি কমে, ফের ঝড় বৃষ্টিতে ঘের প্লাবিত হলো। তার ওপর পোনা ও খাবার সংকট, কর্মচারীদের বেতন সব মিলিয়ে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে খামারিরা। এদিকে, আম্পান ঝড়ের কারণে খুলনার কয়রা উপজেলার ২৪টি পয়েন্ট বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। স্থানীয় অধিবাসী ও প্রশাসনের চেষ্টায় এখনও সেই বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ঝড় শেষ হওয়ার ৮দিন পর ২১টি পয়েন্ট মেরামত সম্ভব হয়েছে। বাকি এখনও তিনটি পয়েন্ট। তবে পুরো এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এই এলাকার ঘেরে ও পুকুর-দিঘিতে যত মাছ ও পোনা ছিল তা সবই মিশে গেছে নদীর পানিতে। অবশ্য সেনাবাহিনী এসব এলাকায় বাঁধের বিষয়ে এখন জরিপ করছে। অচিরেই সেখানে স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হতে পারে। একই অবস্থা সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও। এই জেলারও উপকূলবর্তী বেশ কিছু এলাকায় ভেরিবাঁধের যেসব পয়েন্ট ভেঙে গেছে সেগুলোও এখনও পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
Li
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।