মানিকগঞ্জ ও শিবচর প্রতিনিধঃ
করোনাসংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই জীবিকার তাগিদে গতকালও কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল নেমেছিল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, ইজিবাইকসহ বিকল্প যানবাহনে ৪-৫ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে কোনো রকম শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে ফেরিতে গাদাগাদি করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ফিরছেন। ঈদের আমেজ শেষে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে গতকাল মানুষের চাপ আরও বেড়েছে।
কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া : বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকালও কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটের ফেরিতে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের আরও চাপ বাড়তে থাকে। মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়িঘাটে পৌঁছে ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হয়ে বাড়তি ভাড়া গুনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছতে হয় কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের। ফেরিগুলোতে আগে যানবাহন লোড করে পরে যাত্রী উঠানোর চেষ্টা করে পুলিশ। তবে ফেরিতে শারীরিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম। তবে ঘাট এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট। সকাল থেকে ১৫টি ফেরি দিয়ে সার্ভিস সচল রাখা হয়েছে। ফেরিগুলোতে অ্যাম্বলেন্স, ব্যক্তিগত গাড়ি, কাঁচামাল ও পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ কম থাকলেও যাত্রীদের চাপ ছিল উপচেপড়া।বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়িঘাট ম্যানেজার মো. আলীম মিয়া জানান, কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের চাপের কারণে আমরা ১৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করছি। তবে শারীরিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে যাত্রীরা সরকারের নির্দেশনা মানছেন না। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া : এদিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়াঘাটেও ঢাকামুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শত ঝক্কিঝামেলা আর ভোগান্তিসহ কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। অফিসের বড় কর্তাদের ফোন। কর্মস্থলে যথা সময়ে না গেলে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় সামাজিক দূরত্ব বজায়ের বিষয়টি তাদের অধিাকংশের মাথাই নেই। তাদের একটিই টার্গেট- যে কোনো মূল্যে কর্মস্থলে ফিরতে হবে। গতকাল সকাল থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরিতে এবং সড়কপথে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোবাইকসহ ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করে বসে কর্মস্থল ফেরার ঢল নেমেছিল। দৌলতদিয়া থেকে আসা প্রায় প্রতিটি ফেরি থেকেই শত শত যাত্রী নামছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত গাড়িসহ মোটরসাইকেলের আধিক্য ছিল বেশি। গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এ পথ দিয়েই কর্মস্থলে ফিরছেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের আরিচা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, ১৭ ফেরির মধ্যে ১০টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ৫টি ঘাটের মধ্যে দুটি ঘাট দিয়ে ফেরি পার হচ্ছে। বাকি ঘাটগুলো পানি বৃদ্ধির ফলে ভেঙে গেছে। সেগুলো স্থানান্তরের কাজ চলছে। এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে। এ ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় রিকশা, ভ্যান, অটোবাইক, পিকআপভ্যান, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ফলে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়াও। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা করোনার ঝুঁকি নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় না মেনে গাদাগাদি করে বসে ফেরিতে নদী পার হচ্ছেন। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে পাটুরিয়াঘাটে আসা পোশাকশ্রমিক মামুন মিয়া জানান, ফরিদপুর থেকে সিএনজিতে দৌলতদিয়া পর্যন্ত আসতে ৫০০ টাকা খরচ হয়। আবার এখন পাটুরিয়া থেকে নবীনগর যেতে মাইক্রোবাসে ৫০০ টাকা করে ভাড়া চাচ্ছে। এমনিতেই বাড়ি গিয়ে টাকা-পয়সা শেষ। এর পর এখন কর্মস্থলে ফিরতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আরেক কর্মস্থল ফেরত যাত্রী পোশাকশ্রমিক আফরোজা বেগম জানান, কুষ্টিয়া থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত সিএনজিতে আসতে ৬০০ টাকা ভাড়া নেয়। এখন কর্মস্থল সাভারে যেতে প্রাইভেটকারে ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। সব মিলে কর্মস্থলে ফিরতে ১২০০ টাকা খরচ হচ্ছে।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।