মাওয়া আড়তের ইলিশ পার্সেল হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ।
রুবেল ইসলাম তাহদিদ, মাওয়া (মুন্সীগঞ্জ) থেকে
সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ এবং মাছ উৎপাদনে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কারণে আজ আমরা বিশ্বের মডেল হচ্ছি। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় আর ইলিশ উৎপাদনে প্রথম বল্লেন আড়ত সংশ্লিষ্ঠরা ,মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া পদ্মাপাড়ের মাছের আড়তের নাম ছরিয়ে পড়েছে ইতিমধ্য দেশ জুরে, বর্তমানে পদ্মাপাড়ের মাছের আড়তের কাছেই ফেরি ঘাট হওয়ায় পর্যটকদের জন্যে নদী ভ্রমণ এবং ইলিশ ভোজন এর জন্যে জনপ্রিয় একটি জায়গা মাওয়া, ঘাটের পাড়ে রয়েছে বেশকিছু খাবার হোটেল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ খাওয়ার জন্য অনেকেই মাওয়া ঘাটে ছুটে আসেন।
এখানকার মাছের বাজারে ইলিশ ছাড়াও অনেক বাহারি প্রজাতির তাজা মাছ পাওয়া যায়। মাওয়ার এই ফেরিঘাট সব সময় মেতে থাকে মেলার আমেজে। আবার আশেপাশের সেরা রেস্টুরেন্ট রয়েছে , ঢাকার কাছে অবস্থান হওয়ায় চট করে পদ্মা পাড়ের ফেরি ঘাট হতে দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায়। তাই একদিনের ভ্রমণ করার জায়গা হিশেবে অনেকের কাছে মাওয়া ঘাট অনেক জনপ্রিয় একটি স্থান। রুপালী জলের ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে পাড় ধরে দূরে হেটে যাওয়া কিংবা পদ্মা পাড়ের শান্ত সবুজ গ্রামের যান্ত্রিকতা ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশ আপনাকে আছন্ন করে রাখবে। নৌকায় ঘুরে দেখতে পারবেন পদ্মার বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য। তাছাড়া ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের সাথে পদ্মার ইলিশের স্বাদ কি আর অন্য কিছুতে মেটানো সম্ভব! আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে পদ্মার বুকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় স্পীড বোটে এপার থেকে ওপারে যেতে পারেন।
পদ্মাপাড়ের মাছের আড়তের মূল অর্জন ইলিশ, আর ইলিশের চাহিদা দেশজুড়ে ইলিশ মাছ লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় এ পদ্মা-মেঘনার মিঠাপানির এ অঞ্চলের ইলিশ ধরার জেলেরা বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন। বর্তমান মৌসুমে পদ্মা পাড়ের লৌহজং, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও চাদপুরের মতলব এলাকাগুলোর ইলিশ পরিপূর্ণ স্বাদ থাকায় দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জনপদের মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত স্থানসমূহের মধ্যে একটি বৃহত্তর পদ্মা মেঘনার নাম রয়েছে এ অঞ্চলের ইলিশের।
যার ফলে মাওয়া মৎস আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে মাছ সড়ক, নৌপথ ও আকাশ পথে দেশের বিভিন্ন জেলায়সহ বিশ্বজুড়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো সরকার ঘোষিত ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার ২২দিন পর অর্থাৎ (৪ নভেম্বর) থেকে মাছ ধরা শুরু হয়েছে এখানকার জেলেদের। গেল দীর্ঘ ২২দিন পর তারা নদীতে নামেন ইলিশ শিকারের জন্য। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কম মাছ পাওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছে তারা। জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলার জেলেদেরও পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকার করা সরকারের নীতিমালার ক্ষেত্রে বন্ধ থাকার পরে ফের উন্মত্ত পদ্মায় জাল, নৌকা, ট্রলার ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েছেন ঠিকই, তবে নদীতে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হলেও পর্যাপ্ত ইলিশ তুলনার কম। যাও পাওয়া যাচ্ছে, তা চরা দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, সৈয়দপুর, দক্ষিণাঞ্চলের, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর। এদিকে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম কুমিল্লা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ দেশের প্রায় ১৫-২০টি জেলায় বাজারজাত করা হয় ঐতিহ্যবাহী মাওয়ার ইলিশ মাছ। মাওয়া মৎস আড়ৎ এলাকায় দেখা যায়, বহু আলোচিত মাওয়া মৎস্য আড়তের বেচাকেনা সরগরম ভোর ৫টাথেকে সকাল ৮টা পর্য়ন্ত। প্রায় তিনযুগেরও বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত পদ্মা পাড়ের এ মাছের বাজার নামক মাওয়া মৎস আড়ৎটি পাইকারী বাজার নামেও রূপলাভ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেমন মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের মাছ বিক্রির জন্য আসে, তেমনি ঢাকাসহ দূর দূরান্তের পাইকারাও ভোরে মাছ কিনতে আসেন এখানে। এখানকার মাছ ব্যবসায়ী -মোকলেছুর রহমান বলেন, এ ব্যবসায় অনেক সুবিধা রয়েছে। ঢাকাসহ দূর দূরান্তের পাইকারা ইলিশ কেনার আশায় দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন বহু আলোচিত পদ্মাসেতু এলাকার মাওয়া পদ্মারপাড়ে। কারণ পদ্মার রূপালী ইলিশের বাজার ও সব সময় উত্তাপ থাকে এখানে ইলিশ। তবে দাম হাঁকা হচ্ছে আকাশচুম্বী কারণ চাহিদার তুলনায় মাছ কম। তবে তরতাজা পদ্মার ইলিশ এখন প্রতি পিচ বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে সাড়ে ১৩ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন পাইকার ও স্থানীয় খুচরা বিক্রেতার পাশাপাশি বিত্তবান অনেক ক্রেতা খুব ভোরে মাওয়ায় এসে বেশি দামে কিনে নিচ্ছেন এসব ইলিশ। মাওয়ায় এ আড়তে মাছ ব্যবসায় নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, পদ্মার ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করার পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দুবাই, সৌদি-আরব, মালয়েশিয়া, হংকন, ইতালীসহ বিশ্বের-বহু স্থানে পার্সেল করে পাঠিয়ে থাকি। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে অনেক জায়গা থেকে অর্ডার আসে চাহিদা মতো মাছের সাইজের গরমিল বা সুবিদা মতো না হওয়ার কারণে পার্সেল করতে পারছিনা না। তারা আরো বলেন, দিন দিন বিশ্বের-বহু স্থান থেকে পরিচিতির সংখ্যা বেড়ে চলেছে-সকলের কাছেই পার্সেলের অর্ডার আসে মাছ পাঠানোর জন্য। এ মাছ ব্যবসায় নিয়োজিতরা এখানকার স্থানীয়রাই বেশি। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার জেলের জালে মাছ পাওয়ার সংখ্যা কম থাকায় জেলে ও ব্যবসায়ীদের লাভের অংশ নেই। লৌহজং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা-মোঃ তোপাজ্জল বলেন, সরকার ঘোষিত ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২২ দিন পর থেকে মাছ ধরা শুরু হয়েছে এখানকার জেলেদের।
তবে তারা নদীতে ইলিশ শিকারে প্রতি বছর এ মৌসুমে পদ্মা মেঘনার এ এলাকায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। এবার ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে মা ইলিশ পদ্মা মেঘনার মতো মিঠা পানিতে ডিম ছেড়ে সাগড়ে চলে গেছে। এতে করে পদ্মায় মাছ কিছুটা কম দেখা মিলছে। তবে এ বছরে বেশিরভাগ মাছই এখন দেশের বাইরে যাচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেরা মাছের দাম দাম ভালো পাচ্ছেন, ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আর তাই জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ আগের চেয়ে এখন মাছ ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় আর ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনের ৭৫ শতাংশই বাংলাদেশে হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হারে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে তাতে আগামী কয়েক বছরে উৎপাদন আরও বাড়বে। বিশ্বের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ ইলিশ উৎপাদন দেশ হবে বাংলাদেশ। গত ১০ বছরে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তথ্যানুযায়ী ২০০৭-০৮ অর্থবছরের দেশে ইলিশ উৎপাদন ছিল মাত্র ২ লাখ ৯০ হাজার টন। যা এবার ৫ লাখ টন ছাড়িয়েছে। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর মডেল হবে। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়,এক সময় শীর্ষে পৌঁছব। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রথম।