পুরোনো ছবি
জনি রায়হান
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আখতারুজ্জামানের (৯৮)। পরে লাশ দাফনের জন্য হাসপাতাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত নিয়মাবলী অনুসারে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ও জীবাণুনাশক দিয়ে গোসল করিয়ে প্যাকেট করে ফ্রিজিংভ্যানে তুলে দেওয়া হয়।
কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে লাশটি দাফনের জন্য নেওয়ার পথে লাশবাহী ফ্রিজিংভ্যানটি আজ রোববার দুপুরে আটকে দেওয়া হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্টে।
দাউদকান্দি চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আখতারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেন, করোনায় কুমিল্লার বাইরে মৃত্যু হওয়া কারও লাশ কুমিল্লায় দাফন করতে দেওয়া হবে না। তাদের কাছে এমন নির্দেশনা রয়েছে।
এই অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে লাশটি দাউদকান্দি চেকপোস্টে ফ্রিজিংভ্যানে পড়ে ছিল। লাশের সঙ্গে থাকা স্বজনেরা কী করবেন তা ভেবে উঠতে পারছিলেন না।
ওই লাশের গাড়িতে থাকা মৃত আখতারুজ্জামানের নাতি এমরান আজ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মুঠোফোনে সময় বাংলার অনলাইনকে এসব কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার নানা আজ রোববার সকাল ৬টার দিকে মারা গেছেন। এরপর আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাশ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেই। দুপুর সাড়ে ১২টার পর দাউদকান্দি হাইওয়ে চেকপোস্টে আসলে পুলিশ আমাদের গাড়িটি থামায়। পরে করোনায় আক্রান্ত মৃতদেহ আছে জানার পর লাশ নিয়ে যেতে বাধা দেয় তারা। গাড়িটি আটকে রাখে। আমরা শ্বাসরুদ্ধকর একটা অবস্থায় পড়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের একজন এসআই আমাদের জানায়, তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া আছে করোনায় কুমিল্লার বাইরে মৃত্যু হওয়া কারও লাশ কুমিল্লায় দাফন করতে দেওয়া হবে না।’
এ বিষয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম আমাদের সময় অনলাইন’র কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমন নিদের্শনা আছে। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের জন্য তো আলাদা জায়গা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই তারা লাশটি নিয়ে দাফন করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনও মহোদয়ও বলেছেন, লাশের গাড়ি এলাকায় গেলে গ্রামের মানুষ ঝামেলা করতে পারে। তাই গাড়িটিকে লাশসহ ঢাকায় ব্যাক করতে বলা হয়েছে।’
পরে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে ওসি ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিলেছে। তাই লাশের গাড়িটি চেকপোস্ট থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
এরপর বিকেল পৌনে ৪টায় লাশের গাড়িতে থাকা মৃত আখতারুজ্জামানের নাতি এমরান বলেন, ‘পুলিশ লাশের গাড়িটি ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এখন লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি।’