কুমিল্লায় হোমনায় কলেজপড়ুয়া বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকায় ফয়সাল (২২) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছেন প্রেমিকার ভাই। হত্যার ১২ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেন।
পরে তার দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে সন্ধ্যার পর উপজেলার সাফলেজি গ্রামের আমিরুল ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের নিচতলার মেঝে খুঁড়ে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৫ জুন ফয়সালকে কৌশলে নির্মাণাধীন ওই ভবনে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
নিহত ফয়সাল হোমনা উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। আর অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম শামীম। নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ফয়সালের বোন সালমা আক্তার। তদন্তের পর শামীমকে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হোমনার রাজনগর গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই গ্রামের ফয়সালের। তাদের এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না মেয়ের পরিবার। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ফয়সালের ওপর রেগে ছিল মেয়ের ভাই।
এদিকে গত ৫ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফয়সাল তার মামা নজরুল ইসলামের বাসার ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় একটি ফোনকল পেয়ে তিনি সেখান থেকে চলে যান। এরপর থেকেই ফয়সাল নিখোঁজ হয়। বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে গত ৭ জুন ফয়সালের বোন হোমনা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
গত ৯ জুন মেয়েটির মা রক্তমাখা পলিথিনের বস্তা খালের পানিতে পরিষ্কারের খবর পেয়ে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তা জব্দ করা হয়। ১৩ জুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটির ছায়া তদন্তে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানী ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে শামীমকে গ্রেপ্তারের পরেই বেরিয়ে আসে ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাফলেজি আমিরুল ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদলালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের নিচতলার মেঝে খুঁড়ে মাটিচাপা যুবকের অর্ধগলিত গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার শামীম জানায়, বোনের সঙ্গে প্রেমের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফয়সালকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন সওদাগর বলেন, মেয়ের বাবা ফুল মিয়া পাশের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পাইকারচর গ্রাম থেকে এসে এখানে বসবাস করছেন। তিনি হোমনা এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিনটি হত্যা মামলার আসামি। তার শ্যালকও হত্যা মামলার আসামি। তারা পেশায় কসাই।
জেলা ডিবির পরিদর্শক ইকতিয়ার উদ্দিন জানান, ‘খোঁজ নিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে একই গ্রামের একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারি। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে ছিল মেয়ের ভাই শামীম। বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার ঢাকার চকবাজার এলাকা তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে।’
হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘গত ৯ জুন মেয়েটির মা রক্তমাখা পলিথিনের বস্তা খালের পানিতে পরিষ্কারের খবর পেয়ে আমরা তা জব্দ করি। এতে আমাদের সন্দেহ ঘণীভূত হয়। কী উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে-তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
গত ৫ জুন ফয়সালকে কৌশলে নির্মাণাধীন ওই ভবনে নিয়ে তাকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। পরে মাটি চাপা দিয়ে গ্রেপ্তার শামীম আত্মগোপনে চলে যায় বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
@ SOMOYBNGLAR # কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।