টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে তিন বছর আগে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি স্বামী ইয়াদ আলীকে হারান জহুরা বৃদ্ধা (৬০)। তার স্বামীর নামে দশ টাকা দরের চালের কার্ড ছিল।
তিনি বলেন, ’পোলার বাপ মরার পর সুমন মেম্বর আইয়া কার্ড নিয়া যায়। হের পর যহন চাইল দেয়, তহন গিয়া বইয়া থাকি, কত কই আমারে চাইল দেইন, তারা দেয় না। চেয়ারম্যান কয় মরা মাইশের কার্ডে চাইল ওডেনা।’
অথচ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ওই ইউনিয়নের তালিকা ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ইয়াদ আলীর নামে নিয়মিত চাল উঠছে। ইয়াদ আলীর মতো মৃত ব্যক্তিসহ অনেক লোকের নাম তালিকায় থাকলেও তারা জানেন না তাদের নামে বরাদ্দকৃত সরকারের ওই চাল কে তোলেন!
বছরের পর বছর চাল বিতরণে এমন অনিয়ম করে আসছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ২ নং ঘাটাইল ইউনিয়নের এ কাজে সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানকে তালিকা হালনাগাদ করার জন্য বিভিন্ন সময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দুইবার এবং ইউএনও তিনবার লিখিত নোটিশ প্রদান করলেও তিনি তা করছেন না।
ওই ইউনিয়নে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ৮৩৯ জন। দরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয় বছরে পাঁচবার।
তালিকা ধরে চেয়ারম্যানের নিজ গ্রাম কান্দুলিয়াতে উপকারভোগী ৫০টি পরিবারের সাথে কথা বললে তাদের মধ্যে ত্রিশ পরিবারই জানান তারা জানেন না, তাদের নাম দিয়ে কে বা কাহারা চাল তোলেন। তারা বলেন, দু একবার চাল তোলার পর স্থানীয় মেম্বার সুমন এসে কার্ড নিয়ে গেছেন।
তালিকায় নাম থাকা আজিজুল (৪৫) নামে একজন জানান, আড়াই বছর আগে আমার নামে চালের কার্ড হয়। মাত্র একবার চাল পেয়েছি। দুই বছর আগে সুমন মেম্বার এসে আমিসহ আশেপাশের সবার কার্ড নিয়ে যায়। তাহলে এ চাল কে তোলেন- এমন প্রশ্ন তার।
এ কর্মসূচির ডিলার রেজাউল ইসলাম বলেন, কার্ড পেয়ে আমরা চাল বিক্রি করে থাকি।
চলতি বছর মার্চ মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক দিদারুল ইসলাম ফকির। তিনি বলেন, চাল বিতরণের সময় দেখা গেছে অন্য লোকে কার্ড নিয়ে এসেছেন। কেউ বলেন এটা আমার বাবার কার্ড আবার কেউ বলেন আমার স্বামীর কার্ড। চেয়ারম্যান মেম্বারকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা তথ্য ঠিক আছে বলে আমাকে জানান।
এলাকায় গিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমনকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘাটাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো.হায়দর আলী বলেন, আপনারা সাংবাদিক যা খুশি তাই লিখতে পারেন। যাদের কার্ড নিয়েছি তাদের আমার কাছে নিয়ে আসেন। তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তালিকা হালনাগাদ করে জমা দিয়েছি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শাকীর হোসেন খান বলেন, আমরা শুধু ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করে থাকি। সব দায়িত্ব ডিলার এবং চেয়ারম্যানের।
সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ২০১৬ সালের পর চেয়ারম্যান ওই তালিকা হালনাগাদ করেননি। বারবার নোটিশ করার পরও তিনি সাড়া দিচ্ছেন না।
ওই ইউনিয়নে চাল বিতরণের কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ওই সব বিষয়ে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।